বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা

ইমরানুল বারী সিরাজী:

আজহা বা কোরবানি অর্থ ‘ত্যাগ’ আর ঈদ অর্থ ‘খুশি’। ঈদুল আজহার অর্থ কোরবানির খুশি। এই কোরবানির দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা হয়। এর মাধ্যমে মাল ও সম্পদের ত্যাগ স্বীকার করা হয়। সম্পদ ও মালের কোরবানি দেওয়া হয় এবং এই মালের কোরবানি দিতে পারার মধ্যে মোমিনের একটা আনন্দবোধ থাকে। এজন্যই একে কোরবানির ঈদ বলা হয়। আরবিতে বলা হয় ঈদুল আজহা।

নবীরা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন

হুজুর পাক (সা.) বলেছেন, নবীদেরকে তাদের অবস্থান ও মর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ তায়ালার নিকটতম নবী ও পয়গাম্বর ছিলেন। তাই তিনি বহুকঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন এবং এগুলোতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি কঠিন পরীক্ষা ছিল যে, তিনি পরপর তিনদিন স্বপ্নে দেখলেন আল্লাহ তায়ালা বলছেন, হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার প্রিয় সন্তানকে আমার রাস্তায় কোরবানি করো। নবীদের স্বপ্ন সত্য ও ওহি। তাই তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে গেলেন।

যেমন বাবা তেমন সন্তান

এ বিষয়টি তাঁর একা ছিল না; বরং তাঁর কলিজার টুকরা প্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.) এ বিষয়ে জড়িত ছিলেন। কেননা কোরবানি ইব্রাহিম (আ.) নিজেকে করা নয়, বরং আদরের দুলাল ইসমাঈলকে করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর সন্তান ইসমাঈল (আ.)-কে তাঁর স্বপ্ন সম্পর্কে অবগত করালে ইসমাঈল (আ.) বললেন, যদি আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কোরবানির জন্য আদেশ করে থাকেন তাহলে আপনি আল্লাহর নির্দেশ মস্তক অবনত করে গ্রহণ করেন। আমাকে ধৈর্যশীলদের মাঝে পাবেন। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে গেলেন।

ছেলের পরিবর্তে জান্নাতি দুম্বা

পুত্রের কথা শুনে, পিতা পুত্রকে মাঠে কোরবানি করার জন্য নিয়ে গেলেন। তাঁর হাত-মুখ বেধে কোরবানি করতে শুরু করলেন। হঠাৎ আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে ওহি নাজিল হলো, ‘হে ইব্রাহীম, তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়েছ। তুমি তোমার সন্তানকে ছেড়ে দিয়ে তার পরিবর্তে তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুম্বাটি জবাই করো।’ মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে দুম্বাটি জবাই করলেন।

কোরবানির শিক্ষা

কোরবানির ঘটনার থেকে আমরা এই শিক্ষা পেয়েছি যে, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য প্রিয় থেকে প্রিয়তম বস্তু আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে কোনও প্রকার ইতস্ততবোধ করা যাবে না। কোরবানি সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে’।

কোরবানি হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য

যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে কোরবানি করবে সেই এ মহান প্রতিদানের ভাগীদার হবে। যারা লৌকিকতা ও মনোবাসনা পূরণের জন্য কোরবানি করবে তারা কোনও প্রকার সওয়াব ও প্রতিদান পাবে না।

কোরবানির ফজিলত

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখ অর্থাৎ ঈদুল আজহার দিবসে কোরবানির চেয়ে অন্য কোনও আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা কোরবানিকে কবুল করেন। (তিরমিজি শরিফ)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনাতে দশ বছর ছিলেন, প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।

একদা সাহাবিরা নবী করীম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, এই কোরবানি কী? হুজুর বললেন, কোরবানি তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের (আ.) এর সুন্নত। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, এতে আমাদের জন্য কি প্রতিদান রয়েছে? হুজুর বললেন, প্রত্যেক চুলের পরিবর্তে একটি নেকি পাবে। তাঁরা বললেন, পশমের পরিবর্তে? হুজুর বললেন, পশমের পরিবর্তেও একটি নেকি পাবে। (তিরমিজি শরিফ)

কোরবানির বৈশিষ্ট্য

কোরবানির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কোরবানির মাধ্যমে নিজের ধন-সম্পদের ভালোবাসাকে অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিয়ে শুধু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দেওয়া। পাশাপাশি নিজের জীবনের প্রতি ভালবাসা কমিয়ে শুধু আল্লাহর আনুগত্য ও হুকুম বাস্তবায়নে নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়া। কোরবানির দ্বারা নিজের মাঝে এ প্রভাব পড়ে যে, একটি পশু জবাই করে যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, তবে তাঁর সন্তুষ্টি ও হুকুম বাস্তবায়নের জন্য নিজের আত্মাকে উৎসর্গ করে দেওয়ায় কতটুকু পরিমাণ সওয়াব হবে! কোরবানির মাধ্যমে নিজের আত্মাকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে উৎসাহ জোগায়।

কোরবানি আমাদেরকে মানসিকভাবে এ শিক্ষা দেয় যে, মুমিনের জীবনের যেমন গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য রয়েছে, তেমনি মুমিনের মৃত্যুরও গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য রয়েছে। মুমিনের মৃত্যু শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।

লেখক: খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা

ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION